Description
ঝাউবনের মর্মর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। হীরের নাকছাবির মত শুকতারাটা জ্বলজ্বল করছে আকাশের বুকে। অদ্ভুত এক কল্প কাহিনীর মত নিঃসঙ্গ অঙ্গরাগে দু’একটা তান ঝংকার তোলে রুদ্রর জীবনের সমস্ত মুখড়া, অন্তরা, সঞ্চারী জুড়ে। পেঁয়াজের মত খোসা ছাড়ায় জীবন। সম্পর্ক। পড়ে থাকে যাবতীয় ছক ছবিলা জাল বিছানো অন্ধকার। ফেরারি জ্যোৎস্নার কাঁধে ভর করে রাজা বিক্রমাদিত্যের মত বয়ে বেড়াতে হয় বেতালের শব। ফেলে আসা সব স্মৃতি। রুদ্র জানে তছনছ হয়ে গেছে তার জীবনের সকল ব্যাকরণ। নিজের মনেই হাসে রুদ্র। সিঁধেল চোরের মত মনের গোপনে কোথায় যে কার আপনজন লুকিয়ে থাকে তা খুঁজে বার করে জীবনের উদ্দেশ্য সফল করার নামই কি জীবন? কে জানে!
তন্বী হালদারের উপন্যাস ‘ও দয়াল’ জুড়ে আসলে রুদ্রর এই ‘জীবনের উদ্দেশ্য’ খুঁজে চলার এক চলমান প্রয়াস। সম্ভবত বিমল করের একটা উপন্যাসে এক অবসরপ্রাপ্ত দর্শনের অধ্যাপক সারাজীবন ধরে ‘জীবনের উদ্দেশ্য কী?’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে শেষ বয়সে এসে ছেলের হবু স্ত্রীর কাছে তার উত্তর পেয়েছিলেন। সেই মেয়েটি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিল – ‘ওই প্রশ্নটার উত্তর খোঁজা’।
একদিকে দীঘার অসামান্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দয়ালবাবার আশ্রম, শিশু সলিল, অন্যদিকে অদেখা জন্মদাতা বাবা, মা, বুয়া, স্ত্রী লেখা, লোভনীয় ব্যংকের চাকরি। লোভ, কামনা, স্বার্থপরতার ভয়ংকর ঢেউ বারবার আছড়ে পড়েছে রুদ্রর জীবন সৈকতে। বিরক্ত, জীবনবিমুখ হয়ে সমুদ্রের লবণাক্ত জলে যতবার নিজের অতীত গ্লানি ছুঁড়ে ফেলেছে, ততবার সমুদ্র তার নিজের নিয়মে ফেরত দিয়েছে রুদ্রকে। কিন্তু ফেরত দেবে কি তার বুয়ার হারিয়ে যাওয়া গায়ের গন্ধ, জন্মদাতা বাবাকে অথবা লেখার ভালোবাসাকে। তারই আশায় যেন গভীর সমুদ্রের লবণাক্ত বাতাস কেটে কেটে রুদ্রর এগিয়ে চলা।
পাঠকের কাছে বিপুল সমাদৃত এই উপন্যাসকে শৈবভারতী পত্রিকা ২০১৬ সালে ‘শৈবভারতী কথাসাহিত্য পুরস্কার’-এ সম্মানিত করেছে।
Reviews
There are no reviews yet.